বাংলাদেশ   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

শিরোনাম

ছাগলের সাথে বসবাস খাদিজার

আম্পানের এক বছরেও ক্ষত কাটিয়ে  উঠতে পারেনি কয়রাবাসী

খুলনা প্রতিনিধি :    |    ০৪:২৬ পিএম, ২০২১-০৫-২০

ছাগলের সাথে বসবাস খাদিজার

 


আম্পানের এক বছরেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি কয়রাবাসী। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবের এক বছর পূর্তি হয়েছে বৃহস্পতিবার। অথচ এ প্রলয়ঙ্করি ঝড়ের শিকার অনেক এলাকার মানুষ আজো সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই ক্ষতি। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার। নিজের কিংবা সব হারিয়ে অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর।
গত বছর ২০ মে আম্পানের তান্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার ৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন।
কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মে আম্পানের তান্ডবে দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার, ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, ৪ হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ডুবে গিয়েছিল। এর ভেতর ৭০ পরিবারকে সরকারি ভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে।
আম্পানের রাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি মৎস্য ঘের বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আম্পানের তান্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুঁপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। এখন বেড়িবাঁধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি সর্বহারা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের মাথা গোজার মত ঠাঁই রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে স্বপ্ন দেখছেন বসবাস করার। তবে অনেকেই এখনো রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে রয়েছেন। এসব ইউনিয়নের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আম্পানের এক বছরে আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা, জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় হাটতে হয় মানুষকে। কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫০টি পরিবার নিজ নিজ প্রচেষ্টায় মাথা তুলে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের কেউ সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে গৃহনির্মাণ সুবিধা পায়নি। অনেকেই বাঁধের ঢালে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করছে। আবার অনেক পরিবার শূণ্য ভিটায় নতুন ঘর তোলার চেষ্টা করছেন। ওই গ্রামের মিজানুর মোল্লা বলেন, ‘আমাগের দুরাবস্থার শেষ নেই। আমাগের দুরাবস্থা আমরাই কাটাতি পারতাম যদি বাঁধগুলি ভালভাবে মেরামত করা যেত। বাঁধ মেরামত না হলি, চাইলেও এ দুরাবস্থা কাটানো সম্ভব হবে না।’ দেখা গেছে, আম্পানে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত হলেও ক্ষতিগ্রস্থ ও দূর্বল বাঁধ অনেক স্থানে মেরামত করা হয়নি। গত আমবস্যার জোয়ারে দুর্বল বাঁধ ছাপিয়ে অনেক স্থানে পানি ঢোকে। এতে এলাকার মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পাউবো সূত্র জানায়, আম্পানে ভেঙে যাওয়া ২১টি স্থানে মেরামতের পাশপাশি ১৫ কিলোমিটার বাঁধে মাটির কাজ ও বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকার মনিরুজ্জামান মুকুলের স্ত্রী বলেন, ৫টি ছাগল, ১৫/১৬টি হাঁস ও ১০টি মুরগী ছিল। ঝড়ের রাতে আমরা পাশের একজনের বাড়িতে ছিলাম। পরে এসে দেখি শুধু পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। সব নদীর পানিতে ভেসে গেছে। পরে রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে কোন রকমে একটি ঘর বেধে থাকছি। সব সময় আতংকে থাকি। এর আগে চারবার ভেঙ্গে আমাদের সব জমি নদীতে চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, এক বছরে সরকারি কোন সহায়তা পাইনি। ৩০ কেজি কার্ডের জন্য অনেক হাত পা ধরার পরেও হয়নি। শুধু একটি এনজিও থেকে ৩ হাজার টাকা পেয়েছি।
কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় সবটুকু জমি বছরে বছরে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে নদীতে চলে গেছে। যেটুকু ছিলো সেখানে কোন রকমে ঘর বেধে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। আম্পান ঝড়ের রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেছিলাম। সকালে ফিরে এসে দেখি আমাদের ঘর বাড়ি নেই। বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ির উপর দিয়ে খাল চলে গেছে। পরে বাঁধ হলেও আমার ঘর বাঁধার জায়গা নেই। এখন পরের জায়গায় ঝুঁপড়ি বেধে বসবাস করছি।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আম্পানে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি বর্ষা মওসুমের আগে বাঁধ মেরামত হয়ে যাবে। আম্পানে বিধ্বস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭০ পরিবারকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ^াস বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো নিজেদের চেষ্টার পাশপাশি সরকারি ও বেসরকারীভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে এখানকার বড় সমস্যা পাউবোর দুর্বল বেড়িবাঁধ। এ সম্যস্যার স্থায়ি সমাধান হওয়া দরকার।
ছাগলের সাথে বসবাস আম্পানে বিধ্বস্ত খাদিজার :  এক সময় খাদিজাদের ঘর ছিলো, ছিল জমিও। ৪৫ বছর আগে আবুল হোসেন শেখের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন তার স্বামীর অনেক জায়গা জমি ছিল। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে একটু একটু করে নদী গর্ভে বিলিন হতে থাকে তাদের জমি ও বাড়ি। নদী ভাঙ্গনের সাথে সাথে তারাও দূরে সরে এসে নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকে। এক সময়ে শুধু বসতভিটা ছাড়া সব জমিই কপোতাক্ষ নদীর বুকে চলে যায়। কোন রকমে নদীতে মাছ ধরে টানাপোড়নের সংসার চলতে থাকে।
এদিকে তার স্বামী আবুল হোসেন শেখ এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে ২০০৮ সালে অন্য একজনকে বিয়ে করে পাড়ি জমায় পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায়। শুরু হয় খাদিজার একলা চলার জীবন সংগ্রাম। এরপর নদীতে জাল টেনে কোন দিন একশ’ কোন দিন দেড়শ’ টাকা আয় করে চলতে থাকে মা, মেয়ে ও ছেলের সংসার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় তার শেষ সম্বল বসত ভিটাও নদী গর্ভে চলে যায়। রাস্তার স্লোভে পুনরায় ঘর বেধে জীবনযুদ্ধে লড়াই চলতে থাকে অভাবের সংসার। তিনি নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি সেখানে ছাগলও পালতে থাকেন। এদিকে ছেলেও বড় হয়ে অভাবের সংসার ফেলে অন্য জায়গায় চলে যায়।
গেল বছরের আম্পানে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই ঝুঁপড়িও পানিতে ভেসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আসবাবপত্র ও ঘর, নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সেখানে ঘর বাধার জায়গা না পেয়ে সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা খালের গোড়ায় রাস্তার স্লোভে ছোট ঝুঁপড়ি বেধে কোন রকমে বসবাস করছেন। সেখানে চৌকির উপরে থাকেন তিনি আর চৌকির নিচে থাকে তার পালিত ৮ থেকে ১০টি ছাগল। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা গোড়ায় ঝুপড়িতে বসবাসকারী খাদিজার সাথে স্বাক্ষাতকালে এসব কথা জানালেন তিনি।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, আমি তাকে চিনি। তারা খুবই অসহায়। কোন জায়গা জমি নেই। আম্পানের পরে তাদেরকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সহায়তা তাকে করা হয়নি। তবে এনজিও থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের যে ঘর দিচ্ছেন সেই তালিকায় তার নাম রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনিও পাবেন বলে আশাবাদি। আমার ওয়ার্ডের ৪২ জনের নাম পাঠানো আছে। এর মধ্যে লটারীর মাধ্যমে সাত জনকে ঘর দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য লটারী করায় তার চেয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর পাচ্ছেন।

রিটেলেড নিউজ

সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : : বাস-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক...বিস্তারিত


সার্টিফিকেট বাণিজ্য : তদন্তে বেরিয়ে আসছে অনেক ‘রাঘববোয়াল’র নাম

সার্টিফিকেট বাণিজ্য : তদন্তে বেরিয়ে আসছে অনেক ‘রাঘববোয়াল’র নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনায় ৩০ জনের তালিকা ধরে তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মেট্...বিস্তারিত


বজায় থাকবে তাপপ্রবাহ, বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির আভাস

বজায় থাকবে তাপপ্রবাহ, বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। তবে তাপপ্রবাহও অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার (২৩ ...বিস্তারিত


কাপড়ে পেস্টিং করে কম্বলে মুড়িয়ে স্বর্ণ পাচার!

কাপড়ে পেস্টিং করে কম্বলে মুড়িয়ে স্বর্ণ পাচার!

চট্টগ্রাম ব্যুরো : : কাপড়ে পেস্টিং করে কম্বলের ভেতরে মুড়িয়ে স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দরের ...বিস্তারিত


ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে হাসান (২৬) নামে এক বাংল...বিস্তারিত


দৈনিক আমাদের চট্টগ্রামের সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী

দৈনিক আমাদের চট্টগ্রামের সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী

চট্টগ্রাম ব্যুরো : : চট্টগ্রামে কাজির দেউড়ীতে দৈনিক আমাদের বাংলা ও আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আমাদের  চট্টগ্রামের সম্পা...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  মেঘনা নদীর নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নদীর নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হ...বিস্তারিত


রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : :                              রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে ওয়ানশুটারগান,গু‌লি,...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর