শিরোনাম
মিলন লস্কর, শিলচর (ভারত) : | ১২:৩৬ পিএম, ২০২১-০৮-০১
উত্তর-পূর্ব ভারতে সিপাহি বিদ্রোহের শেষ রণক্ষেত্র লক্ষীপুর মহকুমার বিন্নাকান্দি দ্বিতীয় খন্ডের খংজম লেইকাইকে সিপাহি তীর্থ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিলেন এলাকার জনসাধারণ সহ সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুরা। গত শনিবার বিন্নাকান্দি দ্বিতীয় খন্ডে সিপাহি বিদ্রোহ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক বিশেষ সভা। ওয়াই মনি সিংহর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় এই ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতার প্রথম আন্দোলনে এই অন্চলের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,লেখক ও ইতিহাস গবেষক আবিদরাজা মজুমদার এই সভায় ব৷ক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন,১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ দিয়ে এদেশে স্বাধীনতা আন্দলনের সূত্রপাত।সিপাহি বিদ্রোহের পরই ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে। এরপর মহারাণী ভিক্টোরিয়া ভারতকে বিট্রিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ১৮৫৮ সালের ১২ জানুয়ারি উত্তরপূর্ব ভারতে সিপাহি বিদ্রোহের শেষ লড়াই হয়েছিল বিন্নাকান্দিতে। এখানে সামনাসামনি লড়াইয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। পরে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে শিলচর ফাটকবাজারে ফাঁসিকাষ্টেও ঝোলানো হয়েছিল । অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সম্পর্কে আমরা কেউ কিছু জানি না। জানারও চেষ্টা করিনা।
আবিদরাজা আরও বলেন,ইতিহাস ঘেটে জানা যায় ১৮৫৮ সালের ৭ জানুয়ারি গোবিন্দপুর এবং বিন্নাকান্দির দুরুং বিলে বিদ্রোহী সিপাহিরা ঘোরাফেরা করেছিল। এরপর তারা বনরাজ পরগনার বিদ্রোহিপার হয়ে ভুবনহীলের দিকে চলে যায়। উত্তরপূর্বে সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাসে পয়লাপুলের লালং থেকে শুরু করে বিন্নাকান্দি, কাপ্তানপুর পরগনা দক্ষিণে বনরাজের বিদ্রোহীপার ভুবনহীল পরগনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গনদাবির প্রেক্ষিতেই করিমগঞ্জের লাতু রণটিলা সরকার পর্যটন ও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন,আমরা সবাই মিলে জোরদার আওয়াজ উঠালে সিপাহি বিদ্রোহের শেষ রণক্ষেত্রকেও পর্যটন ও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা
আদায় করতে সক্ষম হব একদিন। প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবিদরাজা বৃহত্তর লক্ষীপুরের ঐতিহাসিক কিছু তথ্য তুলে ধরে বলেন, তার প্রকাশিতব্য ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন লক্ষীপুর বন্দর আড়াই হাজার বছরের পুরাতন, তা সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে। কাপ্তানপুর, বিন্নাকান্দি গ্রামের নামেরও ইতিহাস রয়েছে। এই এলাকা বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মিলনক্ষেত্র। এখানে রয়েছেন মনিপুরি,রংমাই নাগা, কুকি, মার, হিন্দুস্থানি, বাঙ্গালি হিন্দু- মুসলিম ও চা জনগোষ্ঠী। ১৯০১ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন লক্ষীপুর এসেছিলেন। নিকটবর্তী দিলখুস বাগান পরিদর্শন করে শ্রমিকদের মজুরি আট আনা বৃদ্ধিও করেছিলেন তিনি। কাছাড় জেলার বড়খলার ঐতিহ্যবাহী দেবলস্কর বাড়ির রায়বাহাদুর বিপিনচন্দ্র দেবলস্করের চেষ্টায় ১৯১৩ সালে স্থাপিত হয় লক্ষীপুর আর্ল হাইস্কুল ৷ ব্রিটিশ গভর্নর আর্ল এর সাথে বন্ধুত্ব ছিল বিপিনচন্দ্রের।
এই সভায় উপত্যকার আরেক ইতিহাস গবেষক তথা বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শিলচর শহর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর বলেন,বিগত ত্রিশ বছর ইতিহাস চর্চার পর একটি সঠিক জায়গায় এলাম। এটা আমার কাছে সিপাহিতীর্থ। আমাদের বাড়ির কাছেই এই তীর্থক্ষেত্র কিন্তু আমরা জানি না। সিপাহি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে দেশ স্বাধীন হবার পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের এই অন্চলের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এই অন্চলের সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস লিখেছেন প্রয়াত ডঃ সুবীর কর। তা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, কিন্তু আমরা তার খবর রাখিনা। সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে জঙ্গিয়ার গীত সহ বহু গান লোকমুখে ছিল। তা সুবীর কর সংগ্রহ করে তার গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট করেন। সমাজবিজ্ঞানি ডঃ সুজিত চৌধুরীও সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস লিখেছেন। সঞ্জীব বাবু আরও বলেন, সিপাহি বিদ্রোহ মানে শুধু ব্যারাক পুর, নাগপুর নয়। সিপাহি বিদ্রোহ মানে অবিবক্ত সিলেট, লক্ষীপুর,বিন্নাকান্দি, সোনাইএর বিদ্রোহীপার, ভুবন পাহাড়। এই ইতিহাস এলাকাবাসী জানার চেষ্টা করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,এটা শুধু জানলে হবে না সারা বিশ্বকে চিৎকার করে জানাতে হবে । তিনি আরও বলেন বিন্নাকান্দির রণক্ষেত্র থেকে রবার্ট স্টুয়ার্ড দশজনকে ধরে নিয়ে শিলচর ফাটকবাজারে ফাঁসি দেন। বিন্নাকান্দি সিপাহি বিদ্রোহ স্মৃতি রক্ষা কমিটির কর্মকর্তাদের সঞ্জীব বাবু অনুরোধ জানান যেহেতু এই এলাকা মিশ্র জনগোষ্ঠীর বাসভূমি তাই সবাইকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনকে সামিল করতে পারেন। তাহলে শীঘ্রই আপনাদের প্রচেষ্টাব বাস্তব রূপ পাবে।
এই সভায় বরাক উপত্যকায় সিপাহি বিদ্রোহের আরেক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু দিলীপ নাথ বিন্নাকান্দির রণক্ষেত্রকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে তাঁর কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন। সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে তার কিছু গবেষনাধর্মী নথি স্থানীয় সংরক্ষণ কমিটির সভাপতির হাতে তুলে দেন দিলীপ নাথ । সভার শুরুতে বিন্নাকান্দির সিপাহি বিদ্রোহ স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষে ওয়াই নদিয়া সিংহ জানান, সিপাহি বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত লাতু মালেগড় সংরক্ষণে সরকার ব্যবস্থা নিলেও বিন্নাকান্দির এই সম্মুখ রনক্ষেত্র সংরক্ষণের ব্যাপারে কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে ২০১৮ সালে এলাকার কয়েকজন সচেতন নাগরিকের চেষ্টায় সিপাহি বিদ্রোহ স্মৃতি রক্ষা কমিটি নাম দিয়ে একটি সংস্থা গঠিত হয়। কমিটির চেষ্টায় এখানে একটি কমিউনিটি হল নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। নিকটবর্তী জমি ক্রয় করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।এলাকার একজন সদাসয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা জোয়ান নিজ খরচে শহিদবেদী নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে জমি কেনার ব্যাপারে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তিনি সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার অনুরোধ জানান। সভাপতি ওয়াই মনি সিংহ বলেন,দেরিতে হলেও এলাকাবাসী সিপাহি বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি কমিটি গঠন করে বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বরাকের সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস গবেষকরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে সুপরামর্শ ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করায় কমিটি প্রাণ সন্চার লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেন। । এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিতোষ দত্ত, মিলন উদ্দিন লস্কর, আইনজীবি আনোয়ার হোসেন লস্কর, বিশ্বনাথ সিংহ প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডঃ শুভজিত রায়, ডঃ ওয়াই রাসবিহারি সিংহ, পি নগেন্দ্র সিংহ, এস বীরেন সিংহ, এম, মনিবাম সিংহ, কে এস বিশ্বনাথ সিংহ, এস সূর্যমুখী, সিংহ, প্রিয়সখী দেবী প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ম...বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : সিরিয়ায় কন্স্যুলেট অফিসে হামলার জবাবে ইরানের পাল্টা হামলায় কতটা ক্ষতি হয়েছে ইসরায়েলের? সে প্রশ্ন...বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে ভারত। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দ...বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় আয়োজিত এক কনসার্টে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ...বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : সংক্ষিপ্ত ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়েছে মার্...বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : : আফগানিস্তানে গত তিন সপ্তাহ ধরে তুষারপাত এবং বৃষ্টিতে কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দুর্যো...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 Dainik Amader Bangla | Developed By Muktodhara Technology Limited