শিরোনাম
নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলা :- | ০৩:৪৩ পিএম, ২০২০-১০-২১
নবাবজাদা আলি আব্বাসউদ্দৌলা :-
পলাশী একটি বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। এই ষড়যন্ত্রের শিকার
হয়েছিলেন বাংলার বীর দেশপ্রেমি নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
ঐতিহাসিক তপন মোহন চট্টোপাধ্যায় তার ‘পলাশির যুদ্ধ’
গ্রন্থে এ ব্যাপারে খোলাখুলিই লিখেছেন, “ষড়যন্ত্রটা আসলে
হিন্দুদের যড়যন্ত্র। প্রধানত হিন্দুদের চক্রান্ত হলেও বড় মাপের
মুসলমান অন্তত একজনও তো চাই!” আসলে মূল ষড়যন্ত্রে ছিল
হিন্দুরা এবং এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা তাদের সার্বিক সাহায্য
সহযোগিতা করেছে। শুধু নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে তারা
ষড়যন্ত্রে করেনি, তারা অতীতে বহুবার মুসলিম শাসকের
বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
‘জানা অজানায় পলাশী যুদ্ধ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ গ্রন্থে
উল্লেখ আছে... হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব
দূর্গাপূজা। ধর্মীয় উৎসব হলেও তাঁদের কোনো ধর্মগন্থে এ
পূজা সম্পর্কে কোনো কথা অথবা পরিচয় উল্লেখ নেই।
তাঁরা তাদের সম্পর্কে একটি প্রাচীন ধর্ম বলে দাবি করলেও
দূর্গাপূজা উৎসবটি প্রচলন যে প্রাচীনকালে হয়নি, একথা
হিন্দুশাস্ত্রবিদরাও স্বীকার করেন।
দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা বাঙালি হিন্দু ছাড়া পৃথিবীর
আর কোথাও নেই। প্রথম দূর্গাপূজা উৎসব পালিত হয়
নদীয়াতে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরে।
ধর্মীয় উৎসব হিসেবে এটি পালন করা হলেও মূলত ক্লাইভকে
আখ্যায়িত করা হয় ‘মা দূর্গার প্রতীক’ বলে। বীর দেশপ্রেমি
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে করা হয় ‘অশুরের প্রতীক’। এই
অনুষ্ঠানে ক্লাইভসহ ইংরেজ সাহেবদের খুশি করার জন্য বহু
খানা-পিনা ও আনন্দ উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিমা পূজার
চেয়ে সাহেবদের সন্তুষ্ট করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
জনৈক হিন্দু ঐতিহাসিক শ্রী রাধারমন রায় এ ব্যাপারে
স্বীকৃতি জানিয়ে তাঁর ‘সেকালের কলকাতার দূর্গোৎসব’
প্রবন্ধে লিখেছেন ঃ ‘প্রথম দিকে দূর্গাপূজা ছিল পলাশীর
যুদ্ধের বিজয়োৎসব’। পরে তা পর্যবসিত হয়েছিল ‘পলাশীর
যুদ্ধের স্মৃতি উৎসবে’। অর্থাৎ যাই হোক না কেন, এই
উৎসবে ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে ইংরেজ কর্তৃক এদেশ বিজয়ে
হিন্দুদের আনন্দ প্রকাশ করাটাই ছিল প্রধান। অবশ্য ইংরেজদের
জয়ের চেয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনেই যে ছিল তাদের বড়
আনন্দ, সেটা অতি সহজেই বোঝা যায় অনুষ্ঠানের ঘটা
দেখে। সেই তখন থেকেই হিন্দুদের দূর্গাপূজার উৎসব শুরু।
ঐতিহাসিক রাধারমন রায়ের সত্য স্বীকৃতি অনুযায়ী
‘পলাশীর যুদ্ধের বিজয়োৎসব’ হিসেবে এটা চলতে থাকে।
কোনো কাজে যারা জয়লাভ করে, বিজয় তো তাদেরই। আর
বিজয়ের জন্য উৎসব তো তারাই করে। তাহলে কি এ যুদ্ধে বাংলার
বীর দেশপ্রেমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে এদেশে
স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হলেও হিন্দুদের বিজয় অর্জিত
হয়েছিল? তাই কি তারা ধর্মকে আশ্রয় করে বছরের পর বছর ধরে
দূর্গাপূজার নামে ইংরেজদের তোষণ করেছিল? আসলে তারা
ইংরেজ প্রভুদের সম্মান এবং তাদের পলাশী বিজয়োৎসব পালনের
জন্য প্রতি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়কে বেছে নিয়েছিল।
আর এ উৎসবে সকল শ্রেণীর হিন্দুদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার
জন্য অনুষ্ঠানটিকে ধর্মীয় রূপ প্রদান করেছিল। এই পূজাতে
তখন প্রাথমিকভাবে তাদের দূর্গা দেবীর মন্ত্র উচ্চারণের সাথে
সাথে ইংরেজ সরকারের গুণকীর্তন করা হতো। ব্যক্তিপূজাও করা
হতো। এ প্রসঙ্গে লর্ড ক্লাইভকে দূর্গার প্রতীক হিসেবে
উল্লেখ করার কথা তো আগেই বলা হয়েছে।
। ৩ ৪ ।
বস্তুত দেবী পূজা নয়, নতুন প্রভু পূজা এবং সিরাজউদ্দৌলা
নামের একজন দেশপ্রেমি মুসলমান নবাবের হাত থেকে মুক্তির
আনন্দ প্রকাশের জন্যই তারা এই উৎসবের আয়োজন করতো।
তাই দেখা যায়, দূর্গা দেবীকে পূজার জন্য যে সময় ও যে অর্থ
তারা ব্যয় করতো, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় আর অর্থ তারা
ব্যয় করতো উৎসবে ইংরেজ তোষণের মাধ্যমে, প্রভু ভক্তি
প্রমাণে। বাংলার বীর দেশপ্রেমি নবাবের হাত থেকে উদ্ধারকারী
বিদেশী বেনিয়া শাসকদের তো বটেই, তার চেয়ে বড় কথা ওই
বিজয়কে তাদেরই বিজয় হিসেবে গ্রহণ করে তারা উৎসবে
মেতেছিল। এ সময় হিন্দুদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশী
ইংরেজকে তাদের ত্রাণকারী আখ্যায়িত করতেও কার্পন্য করেনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য হিন্দুদের আরও অনেক অনুষ্ঠান ও পূজা আছে।
আর তা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কিন্তু তার
কোনোটাতে-ই ইংরেজরা আমন্ত্রিত হতো না। এতো
জাঁকজমকপূর্ণ এবং ব্যয়বহুলও ছিল না কোনোটাই। পলাশীর
যুদ্ধের পর থেকে প্রচলিত এই একটিমাত্র পূজা অনুষ্ঠান ছিল
ইংরেজ আতিথ্যে পরিপূর্ণ। উল্লেখ করা যায়, হলওয়েলের কথা।
১৭৫২ সালে এই ইংরেজ সাহেব ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলেন
কলকাতায় কালেক্টর হয়ে। পলাশীর যুদ্ধের পর তিনি কাউন্সিলের সদস্য
হন। হিন্দুদের এই দূর্গাপূজা সম্পর্কে তিনি বলেনÑ
‘হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা। এই উৎসবে
সাধারণত সাহেবরা আমন্ত্রিত হতেন। উৎসবের উদ্দ্যোক্তরা তাঁদের
ফল-ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা করতেন। যদ্দিন উৎসব চলতো, তারা
সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় অশ্লীল নাচ-গান উপভোগ করতেন।
অর্থাৎ হলওয়েল সাহেবের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, পূজার
আয়োজক অর্থাৎ হিন্দু বাবুরা পূজার অনুষ্ঠানের চেয়ে
ইংরেজ সাহেবদেরকে উৎসাহিত করতে, তাঁদের প্রতি
কৃতজ্ঞতা জানাতেই বেশি সময় ব্যয় করতো।
পলাশী যুদ্ধে বাংলার বীর দেশপ্রেমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার
পরাজয়ের পর গোটা দেশপ্রেমি দেশবাসী যখন দুঃখে-শোকে
মুহ্যমান, তখনই নবপ্রবর্তিত এই দূর্গা উৎসবের
আয়োজনের বর্ণনা দিতে যেয়ে নদীয়ার মহারাজা নবকৃষ্ণ
একটি চিঠিতে তার জনৈক বন্ধুকে আনন্দ প্রকাশ করে
লিখেছিলেন ঃ এবার পূজার সময় লর্ড ক্লাইভ আমার বাড়িতে
অনুগ্রহপূর্বক প্রতিমা দর্শন করিতে আসিবেন। তাহার
সহিত কোম্পানির বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকিবেন।
পলাশীর যুদ্ধ যাতে বীর দেশপ্রেমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার
পরাজয়ের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়, সে
যুদ্ধে বাংলার বীর দেশপ্রেমি সিরাজউদ্দৌলার প্রতিপক্ষ ইস্ট
ইন্ডিয়া বাহিনীর প্রধান ছিলেন এই বাংলার দুশমন লর্ড
ক্লাইভই। যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে পলাশীতে ঘটলো এ
দেশবাসীর ভাগ্য বিপর্যয়, সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
‘গণ্যমান্য’ ব্যক্তিদের সহচর্য পেয়ে নবকৃষ্ণের মতো অনেক
হিন্দুই সেদিন আনন্দে উল্লসিত হয়েছিলেন। গর্বে বুক
ফুলিয়েছিলেন। তাদের সম্মানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক
বিজয়োৎসব করেছিলেন। এতো বড়ো একটা জাতীয়
বিপর্যয়ের পরে গোটা দেশে যখন অমানিশার ঘন অন্ধকারে,
ঠিক সেই সময়েই এইসব বাবুদের এহেন কাজ-কর্ম
আশ্চর্যজনক হলেও অর্থহীন ছিল না। এদেশের পরবর্তী
ইতিহাসে সে অর্থ পরিষ্কার হয়ে যায়।
অক্ষয় কুমার মৈত্র লিখেছেন, “সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ১৪ মাত্র ১৪
দিন রাজত্ব করলেও নবাব হিসেবে তাঁর যোগ্যতা কোন দিক
দিয়ে কম ছিল না। একাধারে তিনি ছিলেন “নিখাদ
দেশপ্রেমিক”, “অসীম সাহসী যোদ্ধা”, “সকল বিপদে পরম
ধৈর্যশীল”, “কঠোর নীতিবাদী”, “নিষ্ঠাবান”,
“ধার্মিক”, এবং “যে কোন পরিণামের ঝুঁকি নিয়েও ওয়াদা
রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব।”
পলাশীর আম বাগান শুধু ভাগীরথী নদীর তীরে এক ফালি জমি নয়,
। ৩ ৪ ।
পাতানো যুদ্ধ মহড়ার স্থান নয়, পলাশী স্বাধীনতাকামী মানুষের
রক্তক্ষরণের স্থান,সেই সাথে বিশ্বাসঘাতকের শঠতা বোঝার ক্ষেত্রও।
তাই বাংলার স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের কাছে ‘পলাশী’
ইতিহাসের পাঠশালা। আপসহীন লড়াকু মানুষের চোখে
কারবালার শিক্ষা যেমন প্রতিটি ভুঁই কারবালা আর প্রতিদিন
আশুরা। তেমনি বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয়পটে পলাশী
মানে স্বাধীনতার সত্য আকাক্সক্ষা, প্রতিনিয়ত
বিশ্বাসঘাতকতার মোকাবেলায় স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকার।
মিথ্যার কুজ্ঝটিকা সরিয়ে বীর ইমাম হোসাইন ও দেশপ্রেমি
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে চিনে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।
ইমাম হোসাইন ও সিরাজউদ্দৌলা সকল মানব জাতির জন্য
সত্যের প্রতিক। আমাদের মনের মণিকোঠায়,হৃদয়জগৎ
জুড়ে,জাতিসত্তার পূর্ণ অবয়বে বীর ইমাম হোসাইন ও
দেশপ্রেমি সিরাজের স্থান।
লেখক :- নবাব সিরাজউদ্দৌলার ৯ম
রক্তধারা প্রজন্ম।
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : সারাবিশ্বে করোনা মহামারি নিয়ে উৎকণ্ঠা, ভয় শেষ না হতেই সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা উঠছে...বিস্তারিত
মানিক লাল ঘোষ:: : "আমার চেষ্টা থাকবে যুব সমাজ যেনো আই হেটস পলিটিকস থেকে বেরিয়ে এসে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ...বিস্তারিত
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ :: : ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি।ক্যান্সার নামটা ভয়...বিস্তারিত
মো: আলাউদ্দিন : আমরা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিক কিন্তু আমরা ব্যক্তি ক্ষেত্রে কতটুকই বা স্বাধীন! যখন রাত...বিস্তারিত
মো: আলাউদ্দিন : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি, ঐতিহাসিকভাবে আরাকানী ভারতীয়ও বলা হয়ে থাকে এই জনগোষ্ঠিকে। রোহিঙ্গা হ...বিস্তারিত
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি।বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহে...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2021 Dainik Amader Bangla | Developed By Muktodhara Technology Limited