শিরোনাম
চট্টগ্রাম ব্যুরো : | ১১:০৬ পিএম, ২০২৩-১২-০৭
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় গত ৫/১২/২০২৩ ইং তারিখ মঙ্গলবার জোহরের নামাজের সময় জামিয়ার মসজিদে নামাজ পড়ার লক্ষ্যে দলে দলে মানুষ মাদরাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছিল। এক পর্যায়ে নামাজ আরম্ভও হয়ে যায়। ঠিক সে মুহুর্তেই জামিয়ার উত্তর গেইটে ভীড় জমায় কিছু লোকজন। তাদের মধ্যে একজন নামাজ চলাকালীন সময়ে নামাজ না পড়ে ঠিক গেইটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর এতেই সেখানে কিছুটা ভীড় জমে যার দরুন কয়েকজন ছাত্র তাদেরকে অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় মুসল্লিদের আসা যাওয়ার জন্য পথ ছেড়ে দিতে আহবান করে।
কিন্তুু এতেই যেন ঐ ব্যক্তি ও তার সাথের আরও কিছু লোকজন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। শুরু করে দেয় মসজিদের গেইটে এক বিশৃঙ্খলা যা ভেতরে অবস্থানরত মুসল্লি ও ছাত্রদের নামাজে বিঘ্ন ঘটায়। পরিচয়সূত্রে জানা যায় গেইট আগলে দাড়ানো লোকটি শোভনদণ্ডি এলাকার চেয়ারম্যান এহসান সাহেবের ভাই।
যাইহোক, এক পর্যায়ে ছাত্ররা তাদেরকে আবার বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় দারোয়ানকে বলা হয় গেইট লাগিয়ে দিতে; যেন বহিরাগত কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। ফলে দারোয়ান গেইট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য সামনে অগ্রসর হলে ঐ লোক ও তার সাথী সঙ্গিদের কয়কেজন দারোয়ানকে আঘাত করে। বৃদ্ধ মানুষ তাদের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ভূপতিত হন সাথে কিছুটা আঘাতপ্রাপ্তও হন তিনি।
এরপর দেখা গেল মসজিদ থেকে বের হতে শুরু করে তাদের আরও লোকজন যারা মুসল্লির বেশে ভেতরে প্রবেশ করেছিল। তারা বের হয়েই চিৎকার করতে শুরু করে। ছাত্রদের সাথে রীতিমতো ঝগড়া বাঁধানোর উপক্রম। এর মধ্যে উল্যেখযোগ্য কয়েকজন মাদরাসার মাঠে এসে চিৎকার জুড়ে দিয়ে ছাত্রদের দিকে তেড়ে আসে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো শোভনদণ্ডি এলাকার ইউসুফের পাড়ার বাসিন্দা ও খরনা ইস্কান্দারিয়া জামে মসজিদে কর্মরত খতিব ইমতিয়াজ। পুরো মাঠ জুড়ে গলা ফাটিয়ে জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকদের কে লক্ষ করে বিভিন্ন মানহানিমূলক শব্দে চিৎকার করতে থাকে। অথচ সে এই জামিয়া থেকেই পড়াশোনা শেষ করেছে। যাদের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় লোক সম্মুখে গালাগালি করছিল, তারা তারই উস্তাদ। তাদের কাছেই সে হাদীসের দরস গ্রহন করেছিল।
কিন্তুু আফসোস! সে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছে তার পরিচয়। যেখান থেকে ইলমে দ্বীন অর্জন করেছিল সেখানেই আক্রমণ করতে আসলো, যাদের ছত্র ছায়ায় দ্বীনি শিক্ষা গ্রহন করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই অশালীন বক্তব্য, তাদেরকেই কটাক্ষ করলো।
কওমী অঙ্গন যেন তার মত সন্তান গর্ভধারণ না করে!
তার নেতৃত্বে বহিরাগত ঐ সকল লোকজন এমনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল যেন তাদের উদ্দেশ্যই গায়ে পড়ে ঝগরা বাঁধানো।
ছাত্র জনতা তাদের এহেন অশালীন ও অমানবিক আচরণে ক্ষুদ্ধ হতে শুরু করলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ছাত্ররা কিছুটা শান্ত হলেও বহিরাগত ঐ সকল লোকজনদের যেন শান্ত হওয়ার কোন নাম নেই। তাদেরকে যতই শান্ত হয়ে মেহমান খানায় বসতে বলা হচ্ছিল, তারা ততই অভদ্রতা প্রদর্শন করে যাচ্ছিল। এমনকি বহিরাগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দলটির লিডার ইমিতিয়াজ সহ আরও কয়কেজন ছাত্রদেরকে টেনে হিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ভেতরে যখন অবস্থা এমন, ঠিক ঐ মুহুর্তে বাহির থেকে মাদরাসার প্রধান ফটকে ভীড় জমায় আরও কিছু বহিরাগত লোকজন, তাদের বেশ-ভূষা দেখে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক বলে মনে হয়নি। তারা গেইটে সমবেত হয়ে মাদরাসার বিরুদ্ধে জ্বালাও পোড়াও শ্লোগান দিতে শুরু করে। এমনকি তারা সকলে মিলে মাদরাসার প্রধান ফটকে ধাক্কা দিতে থাকে। জামিয়ার কিছু ছাত্র সেটা আটকে রাখতে চাইলেও এক পর্যায়ে তারা গেইটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তুু অবাক করা বিষয় হলো, গেইট খুলে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের গাড়ী ভেতরে চলে আসে। যেন তারা সন্ত্রাসীদের গেইট ভাঙ্গার অপেক্ষায়ই ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী অনুযায়ী পুলিশের গাড়ী মাদরাসার অদূরেই অবস্থান নিচ্ছিল প্রধান ফটকে আক্রমণ করার আগে থেকেই। এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখেও কিন্তুু কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং গেইট ভেঙ্গে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাৎক্ষনাত মাদরাসার ভেতরে প্রবেশ করে।
এরপর শুরু হয় সমস্ত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আক্রমন। তাদের হাতে ছিল লোহার রড,হকি স্টিক,লাঠিসোঁটা সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। সামনে থাকা কিছু ছাত্রদেরকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে তাদের বেশ কিছু লোকজন। কিছুক্ষণ পরেই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমতিয়াজ, ও মুরাদাবাদের আশরাফ সহ আরও বেশ কিছু লোকজন কিছু ছাত্রকে পিটিয়ে জখম করে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পুলিশের গাড়ীতে তুলে দেয়। কিন্তুু এতেও যেন তাদের ক্ষোভ থামছে না। পুলিশের গাড়ীতে গিয়ে নিরিহ ছাত্রদেরকে মারতে থাকে। আর এই সম্পূর্ণ ঘটনাটিও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই ঘটে।
দীর্ঘক্ষণ আক্রমণ করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শুভ বুদ্ধির উদয় হলে তারা ঐ লোকদেরকে দমন করে। কিন্তুু এভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করা লোকগুলোকে যেন পুলিশের একবারের জন্যও মনে হয়নি তারা সন্ত্রাসী। তাদেরকে স্বসম্মানে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায় নি। বরং তাদেরকে দমানোর পরিবর্তে উল্টো ছাত্র জনতার দিকে বার বার তেড়ে যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে ছাত্রদের কঠোর দাবির সম্মুখে বাধ্য হয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরকে বের করে দেয়। যাক তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই ভেতরে থাকা বিশৃঙ্খলাকারীদের মূল হোতাদেরকে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।
পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হলে জামিয়ার মেহমান খানায় পুলিশের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মাদরাসার কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে নেতৃত্বদাতা ইমতিয়াজের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। অবাক করা বিষয় হলো স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে মাদরাসায় "বিশৃঙ্খলা" বহিরাগতরা সৃষ্টি করেছে,এবং তাদের হাতে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রও ছিল, কিন্তুু কোন এক অদৃশ্য যুক্তিতে পটিয়া থানার পুলিশের ওসি সাহেব বারবার মাদরাসা বন্ধ করতে শিক্ষকদেরকে চাপ প্রয়োগ করছিল। অথচ তাদের আইনি দায়িত্ব ছিল সবকিছু দেখার পর যাদের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা হয়েছে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া,তাদেরকে জামিয়ার ত্রী সীমানা থেকে উৎখাত করা।
যাইহোক তাৎক্ষণিক জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জন্য এক পর্যায়ে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস ও পরিচালনা পরিষদের প্রধান আল্লামা হাফেজ মুফতি আহমদুল্লাহ সাহেব দা.বা. এর বাসায় কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা হযরতের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। এবং বিষয়টি নিয়ে সেখানেও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। উক্ত বৈঠকেও ওসি সাহেব মহোদয়ের দাবি ছিল একটাই, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা।
কিন্তুু সিনিয়র শিক্ষকদের ব্যখ্যার সামনে তার অযৌক্তিক দাবিটা শিথিল হয়ে যাওয়ায় তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে মজলিসে শুরার অধিবেশন করার সিদ্ধান্তের উপর রাজি হন। এজন্য আমরা ওসি সাহেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব ওসি সাহেবের কাছে প্রশ্ন করেন, শুরার মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেলে সেটা আমরা আপনাদেরকে কিভাবে জানাবো? এর জবাবে তিনি বলেন হামজা সাহেব আমাদেরকে যদি বলে সমাধান হয়ে গেছে, তবেই আমরা হস্তক্ষেপ করা থেকে পিছু হটবো। প্রতিত্তোরে হাফেজ আহমদুল্লাহ বলেন, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা তো বহিষ্কৃত, তার কথায় কেন সমাধান হবে? বরং শুরা যেটা সমাধান দিবে সেটাই চুড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় এই লোমহর্ষক ঘটনার নেপথ্যে কারা। কাদের নির্দেশে এই সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে!
যাইহোক অবশেষে আসাতিযায়ে কেরামদের শুরা অধিবেশনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঘটনার অবসান হয়, এবং অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদেরকেও মুক্তি দেওয়া হয়। এভাবেই সমাপ্ত হয় জামিয়ার ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়!
পুরো ঘটনায় একটা জিনিস দিনের আলের ন্যায় স্পষ্ট, আর তা হলো মাদরাসায় কোন সন্ত্রাসী নেই। কওমী মাদরাসায় সন্ত্রাস থাকতেই পারে না। বরং যারা এতদিন জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে সন্ত্রাস বলে আসছিল, তারাই আজ নিজেদের সন্ত্রাসী মুখোশ উন্মোচন করলো। পুরো ঘটনায় কোন ছাত্র কাউকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়নি। ছাত্রদের অবস্থান ছিল একদমই স্বাভাবিক। সুতরাং যারা আজ থেকে জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে জঙ্গি-সন্ত্রাস বলে প্রচার করবে তারাই জাতির কাছে সন্ত্রাস বলে বিবেচিত হবে।
তাদের উদ্দেশ্য কওমী মাদরাসাকে ধ্বংস করা। জামিয়ার স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে তারা অস্বাভাবিক করে তুলতে চায়। তারা ছাত্রদের পড়ালেখা ধ্বংস করতে চায়। আর যাদের উদ্দেশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পড়ালেখা ধ্বংস করা তারা শিক্ষার বিরুদ্ধে, আর যারা শিক্ষার বিরুদ্ধে তারা জাতির বিরুদ্ধে।
আমরা আশা করছি জামিয়া পটিয়াকে নিয়ে যারা এরুপ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করবে। পাশাপাশি জামিয়ার এই কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের জনগণকে মাদরাসার সার্বিক কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য আহবান করছি।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারী চাকরীতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে (২০১২ সাল থেকে) সরকারের দৃষ্ট...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডি নির্বাচনে দাতা সদস্য প্রতিনিধি পদপ্রার্থী বী...বিস্তারিত
চট্টগ্রাম ব্যুরো : : নগরের সাগরিকা পশুর হাটের পশ্চিম পাশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এক একর জায়গায় প্রায় ১০০ কোট...বিস্তারিত
আমাদের বাংলা ডেস্ক : : পি সি দাশ : সিলেট শহরে মাত্র ১৫ মিনিটের কালবৈশাখি ঝড় সহ শিলাবৃষ্টি ব্যাপক তান্ডবে আঁতক ছড়িয়ে পরে সি...বিস্তারিত
আমাদের বাংলা : : উখিয়া প্রতিনিধি : উখিয়ায় পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় মোহাম্মদ আলম (২৮) নামক এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত ...বিস্তারিত
এস এম নকিব নাছরুল্লাহ্, পিরোজপুর : : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 Dainik Amader Bangla | Developed By Muktodhara Technology Limited