বাংলাদেশ   শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

শিরোনাম

তদন্তে ‘ম্যাজিক’ দেখাচ্ছে পিবিআই, কুড়োচ্ছে আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০১:৪৫ পিএম, ২০২২-০২-০১

তদন্তে ‘ম্যাজিক’ দেখাচ্ছে পিবিআই, কুড়োচ্ছে আস্থা

নিখুঁত তদন্তে জটিল ঘটনারও রহস্যভেদ করে প্রশংসা কুড়োচ্ছে পিবিআই
** পিবিআইয়ের জনবল দুই হাজার ২৪৬ জন
** ২০১৮ সালে পিবিআই ১৫০৫১টি সিআর মামলা তদন্ত করে, ২০২১ সালে ২৮৩৯৯টি
** এ পর্যন্ত ৮৭২৮২টি সিআর মামলা তদন্ত করেছে পিবিআই

ছয় বছর আগের ঘটনা। চট্টগ্রাম থেকে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাস থামে গাবতলীর সালসাবিল পেট্রল পাম্পের পাশে। সব যাত্রী নিজেদের মালামাল নিয়ে নেমে গেলেও পাওয়া যাচ্ছিল না চট্টগ্রামের এ কে খান কাউন্টার থেকে তুলে দেওয়া একটি হলুদ রঙের ট্রাংকের মালিককে। এতে ঈগল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজারের সন্দেহ হয়। তখনই তিনি খবর দেন গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ এসে ট্রাংকটি খুলেই ভেতরে পায় এক অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ। বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।
সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম এ কে খান কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে পরের কাউন্টার থেকে একজন নারী উঠবেন জানিয়ে তড়িঘড়ি করে ট্রাংকটি বাসের বক্সে তুলে দেন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। কিন্তু পরের কাউন্টারে আর কোনো নারী ওঠেননি।

গাবতলীতে সেই ট্রাংকটি খুলে পাওয়া মরদেহের কোনো পরিচয় না মেলায় দারুসসালাম থানা পুলিশ এ সংক্রান্ত একটি মামলা করে এবং লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহটি ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। থানা পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটির তদন্ত করলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেলেনি ওই নারীর পরিচয় কিংবা হত্যার কোনো রহস্য।

দীর্ঘদিন এই হত্যা নিয়ে কিছু না হওয়ায় আসামি হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন ঘটনা সেখানেই শেষ। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। প্রায় দুই বছরের তদন্তে চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে উদ্ঘাটিত হয় ঘটনার রহস্য। জানা যায়, সেই নারীর নাম শম্পা খাতুন, তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কথিত স্বামী রেজাউল করিম স্বপন শ্বাসরোধ করে শম্পাকে হত্যা করে মরদেহ গোপন করতেই ট্রাংকে ভরে ঈগলের বাসে ‘অজানা গন্তব্যে’ পাঠিয়ে দেন।

২০১৫ সালের ৩ মে ওই মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে জানা যায়, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এসময় শম্পা হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। সেখানে শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের একটা সময় পর্যন্ত একত্রে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও বিয়ে করেননি।

পরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে রেজাউল করিম ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে শম্পাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মরদেহ গোপন করতে সেটি ট্রাংকে ভরে ঈগল পরিবহনের ওই বাসে তুলে দেন। শম্পার বাবাকে জানান, তাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে শম্পা বাড়িতে না পৌঁছালে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। না পেয়ে শম্পার ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরেই হত্যাকাণ্ডটির রহস্যভেদ করে পিবিআই।

পরে ২০২১ সালে কুমিল্লা থেকে রেজাউল করিম স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে আদালতে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘মামলাটি তদন্তে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এটি আদালতে বিচারাধীন। এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলও করা হয়েছে।’

শুধু এমন হত্যাকাণ্ডই নয়; ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, চুরি, প্রতারণা, জালিয়াতি, মাদকসহ থানায় করা (জিআর) ১৬ ধরনের তফসিলভুক্ত মামলার পাশাপাশি তফসিলবহির্ভূত অন্যান্য মামলা এবং আদালতের নির্দেশে (সিআর) নানা ধরনের মামলার তদন্তে ‘চমক’ দেখাচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই। এসব মামলার কোনোটা থাকে শম্পা হত্যার মতো নানা রহস্য আর জটিলতায় পূর্ণ। কোনোটা আবার বেশ চাঞ্চল্যকর। এসব মামলার তদন্তে রহস্য উদ্ঘাটন করতে অ্যানালগ পদ্ধতির পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তিরও সহযোগিতা নেয় পিবিআই। ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংস্থাটি তদন্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নেয় নানা কৌশল। যেমন- বাদী ও বিবাদীর বিস্তারিত বক্তব্য নেওয়া, পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থাকে গুরুত্ব না দেওয়া, সামাজিক মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয় তার ওপরও দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি।

আস্থা বাড়ছে মানুষের, বাড়ছে তদন্তের চাপও
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, তদন্তে কারও প্রতি আনুগত্য যেন দেখাতে না হয়, সেজন্য যেমন কৌশল নেয় পিবিআই, তেমনি এড়িয়ে চলে রাজনৈতিক প্রভাবও। তাছাড়া শুরুতেই কাউকে দোষী হিসেবে মনস্থির না করে তদন্ত চালায় সংস্থাটি। রহস্যজনক ও ক্লুলেস (আলামতহীন) ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের জন্য বিধি অনুযায়ী করা হয় টিম। আন্তর্জাতিক মানের নানা প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও তদারকির ফলে পুরো টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।

পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় থাকে বলে পিবিআইয়ের তদন্তের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে। মানুষের আস্থা বাড়ায় এবং জটিল ঘটনার রহস্য উদঘাটনের নজির তৈরি করায় পিবিআইয়ের ওপর মামলা তদন্তের চাপও বাড়ছে। সীমিত লোকবল, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও সময়ের স্বল্পতার মধ্যেই মামলার সংখ্যার ঊর্ধ্বমুখিতা ভাবিয়ে তুলছে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের।

পিবিআইয়ের আইন ও গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা যায়, পুলিশের ১৫টিরও বেশি ইউনিটের মধ্যে অন্যতম পিবিআই ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে গড়া পিবিআই ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একটি নিজস্ব বিধিমালা পেলেও মামলা তদন্তের কাজ শুরু করে ২০১৫ সালের ১০ জুন থেকেই। এরই মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক মামলার প্রকৃত চিত্র তুলে এনে প্রশংসা কুড়িয়েছে সংস্থাটি। রাজধানীর রমনায় ৩০ বছর আগের সগীরা মোর্শেদ হত্যা মামলার আসামি শনাক্ত, ২৪ বছর পর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন, ২০১৯ সালে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীকে সময়মতো অক্সিজেন না দিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগের তদন্ত আলোচনায় এনেছে পিবিআইকে।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ধনী কিংবা গরিব, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত—সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমান গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত করে পিবিআই। এ কারণে কয়েক বছর ধরে পিবিআইয়ের ওপর মামলা তদন্তের চাপ বেড়েই চলেছে।

সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার দেওয়া তথ্য মতে, আদালতের নির্দেশে (সিআর) ২০১৮ সালে পিবিআই যেখানে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল ১৫ হাজার ৫১টি মামলার, ২০২১ সালে তাদের কাঁধে এসেছে ২৮ হাজার ৩৯৯টি মামলা। সংস্থাটি ২০১৮ সালে যেখানে পাঁচ হাজার ৪৬৯টি থানায় দায়ের হওয়া মামলা (জিআর) তদন্তের দায়িত্ব পায়, ২০২১ সালে তাদের দপ্তরে এসেছে ছয় হাজার ৮৭১টি মামলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পিবিআই আদালতের নির্দেশে (সিআর) মোট ৮৭ হাজার ২৮২টি মামলার তদন্ত করেছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৭৩টি মামলার নিষ্পত্তি করেছে তারা। এসব মামলার ২৭ হাজার ৫৩০টিতে দেখা গেছে, এজাহারে যে অভিযোগ ছিল তা তদন্তে অপ্রমাণিতই হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭৯২টি জিআর মামলার মধ্যে পিবিআই নিষ্পত্তি করেছে ১৭ হাজার ৯৫টি মামলা। এসব মামলার চার হাজার ৯৯০টিতে দেখা গেছে, এজাহারে যে অভিযোগ ছিল তা তদন্তে অপ্রমাণিত হয়েছে।

ইউনিটের তদন্ত ও অগ্রযাত্রার বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার  বলেন, ‘মানুষের আস্থা আছে কি না তা জানি না। তবে আমাদের কাজটা হলো, যে তদন্তগুলো আমাদের কাছে আসে সেগুলোর মধ্যে ছোটখাটো বিষয়, জটিল খুন, চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও জালিয়াতির মতো বিষয় থাকে। আমরা সব মামলা একই রকম গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, কোন পরিবার থেকে মামলা করা হয়েছে বা ভিকটিম আমাদের বিষয়বস্তু হয় না। বিষয়বস্তু হয় ঘটনা যেটা হয়েছে সেটিই ঠিকমতো তদন্তে উদ্ধার করা। তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনা একটু জটিল মনে হলে বিধি অনুসারে টিম করে দেই, যেন পরামর্শ করে তদন্ত এগোতে পারে। ফলে ছোট-বড় সব মামলায় চেষ্টা করা হয় ভিকটিম ও আসামি উভয়ই যেন বিচার পান। যিনি জড়িত ছিলেন না, তিনি যেন অভিযুক্ত না হন। আবার করেছেন এক অপরাধ, তাকে যেন অন্য কোনো অপরাধে যুক্ত না করা হয় বা দণ্ডের সুপারিশ না করা হয়।’

হত্যা মামলার বাদীই তদন্তে আসামি প্রমাণিত
আদালতের নির্দেশে প্রতারণা, জালিয়াতি, জমিজমার বিরোধ, হত্যার হুমকিসহ প্রভৃতি মামলার সবচেয়ে বেশি তদন্ত করে পিবিআই। মামলার তদন্তে অনেক সময় খোদ বাদীকেই দোষী পাওয়া যায়। যেমন, গত বছর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মো. স্বপন মিয়া নামের এক চা বিক্রেতা হত্যাকাণ্ডে তার ভাই মো. রিপন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে বাদীর নিজেরই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য। ফলে বাদীই হয়ে যান বিবাদী।

ভুক্তভোগী স্বপন মিয়ার স্ত্রী পুতুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার একটা ধারণা ছিল রিপনই কাজটা করছে। আর কেউ কখনো আমার জামাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া-গালিগালাজ করতো না সে ছাড়া। পুলিশ ঘটনাটা বের করতে পারেনি। পিবিআই তদন্ত করে রিপনই মারছে এটা বের করছে। এখন তার ফাঁসি হোক এটাই চাই।’

এ ধরনের ঘটনায় শুধু সাধারণ মানুষই নন, পুলিশের সদস্যদেরও জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে এনেছে পিবিআই। চট্টগ্রাম নগরে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার বিষয়টিও বেরিয়ে আসে পিবিআইয়ে তদন্তে। সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেনের জড়িত থাকার কথা তার সহকর্মীদের জবানিতেও বের করে আনে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এসব তদন্তে ভুক্তভোগী বা তাদের স্বজনরা সন্তুষ্ট হলেও কিছু কিছু সময় ঝুঁকিতে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের, এমনকি কারও কারও কপালে অপবাদও জোটে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা নিজেরা কিছুটা ঝুঁকি নেই। যে মামলাগুলো আদালত থেকে আসে সে মামলার সব আসামির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে থাকি। তাদের ভাষ্যটা জানার চেষ্টা করি। এতে আমাদের তদন্তে কিছুটা সুবিধা হয়। আবার এমনও হয়েছে অনেকে জানেন না তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সুতরাং তাকে জিজ্ঞেস করে না এগোলে তদন্ত একতরফা হয়ে যেতো। কিন্তু অসুবিধাটি হলো, বাদী যখন দেখেন, পিবিআইয়ের অফিসে বিবাদীরা বসে আছেন, তখন তিনি ভাবেন নিশ্চয়ই কোনো আর্থিক বা কোনো সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে আনা হয়েছে। অনেক কিছুতেই বিরূপ চিন্তা তৈরি হয়। তবে অভিযোগটা আমরা শুরু থেকে মাথায় নিয়েই তদন্তে প্রকৃত বিষয়টি বের করে আনার চেষ্টা করি।’

পিবিআইয়ের তথ্য মতে, তাদের তদন্তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য পিবিআই ল্যাবরেটরিতে বিশেষ ডিভাইস ও সফটওয়্যার যেমন আছে, তেমনি ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের জন্য সহায়তা নেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের। এভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে বেরিয়ে আসছে প্রকৃত ঘটনা। ফলে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন নিরপরাধ ব্যক্তি, ধরা পড়ছেন আসল অপরাধী।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের বাসিন্দা মো. আব্দুল মতিন একটি হত্যা মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন। তিনিও নিরপরাধ সাব্যস্ত হয়েছেন পিবিআইয়ের তদন্তে। আব্দুল মতিন  বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, তেমন কিছু নেই। একটা হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। অথচ আমি কিছু জানিই না। পরে পিবিআই এটার তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের ধরে। তদন্তটা ভালো হওয়াতে বেঁচে গেছি, নইলে আমার পরিবারসহ সবাই শেষ হয়ে যেতাম।’

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার চারটিসহ সারাদেশে মোট ৪৯টি ইউনিট নিয়ে কাজ করছে পিবিআই। কয়েক বছর আগেও তাদের তদন্তের ৭৫ শতাংশ মামলা আসতো আদালত থেকে (সিআর)। কিন্তু এখন তাদের মামলার প্রায় ৮১ শতাংশই আদালত থেকে আসা। এসব মামলার অধিকাংশই রহস্যজনক মৃত্যু, প্রতারণা, অর্থনৈতিক প্রতারণা ও জালিয়াতির। এগুলোর তদন্ত সাধারণ মামলার চেয়ে বেশি সময়সাপেক্ষ। ফলে একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে দুই হাজার ১১৬ পুলিশ সদস্য ও ১৩০ জন সিভিল সদস্যের মোট দুই হাজার ২৪৬ জন লোকবল নিয়ে গড়া সংস্থাটি সময় দিয়ে নিখুঁত তদন্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, ‘সীমিত জনবল নিয়েও তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় তদন্তের গতিটা মোটামুটি সঠিক লাইনেই থাকে। তবে সবসময় যে আমরা পারি তা নয়। সেখানে অনেক সময় মেধার অভাব থাকে, বোঝার ভুল থাকে, নিজস্ব কিছু ত্রুটি থাকে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যেন ভিকটিম ও আসামি উভয়েই ন্যায়বিচার পান।’

তদন্ত সংস্থায় জনবল বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতে বিচার হয় পিবিআইসহ রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থার সঠিক তদন্তের ওপরই। দেশে বিচার হয়, কিন্তু ন্যায়বিচার নিয়েই প্রশ্ন ওঠে কিছু কিছু সময়। নিম্ন আদালতে বিচার প্রভাবিত হয় অনেক সময়। কিন্তু তদন্ত যদি ভালো হয়, তখন বিচারটাও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে পিবিআইসহ তদন্ত সংস্থাগুলোর জনবল ও সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘সমাজে নানা অপরাধ হয়। এসব অপরাধের মামলা তদন্তে পিবিআইসহ তদন্ত সংস্থাগুলো কাজ করে। বিচার হচ্ছে, কিন্তু ন্যায়বিচার নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে। তদন্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ জনবল নিয়ে কাজ করে। এই জনবল নিয়ে এত তদন্ত করা কঠিন। তাই তাদের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যেন না হয় সেটিও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।’

ড. আমানুল্লাহ বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ভালো কাজের জন্য অন্য দেশের মতো আমাদের দেশে প্রণোদনা নেই। কিন্তু ভালো কাজের স্বীকৃতি কিংবা উৎসাহ দিতে প্রণোদনা দেওয়া উচিত।’

সুত্র : জাগো নিউজ

রিটেলেড নিউজ

তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে

তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শনিবার দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে দুই বিভাগ ছাড়া দেশের আর কোথাও বৃষ্টি হওয়ার সম...বিস্তারিত


চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ ব্যবস্থা

চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বায়ুদূষণ রোধ ও তীব্র তাপদাহে শহরকে ঠান্ডা রাখতে নগরীতে স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি...বিস্তারিত


তীব্র তাপপ্রবাহ : বন্ধ থাকছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক চলবে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত

তীব্র তাপপ্রবাহ : বন্ধ থাকছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক চলবে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই রোববার (২৮ এপ্রিল) খুলছে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে বিদ্যালয় প...বিস্তারিত


জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

চট্টগ্রাম ব্যুরো : : ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার হোমনা থানা এলাকার বাঘা শরীফ বলী।   বৃহ...বিস্তারিত


বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা অবাধে প্রবেশ করে থাকেন। তবে গত এক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে প...বিস্তারিত


বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজডুবি, ভাসছেন ১২ নাবিক

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজডুবি, ভাসছেন ১২ নাবিক

নোয়াখালী প্রতিনিধি : : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার পূর্ব পাশের বঙ্গোপসাগরে এমভি মৌ-মনি নামে একটি কার্গো জাহাজডুবির ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  মেঘনা নদীর নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নদীর নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হ...বিস্তারিত


রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : :                              রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে ওয়ানশুটারগান,গু‌লি,...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর