শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৫:৩৪ পিএম, ২০২২-০৪-০৫
রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাংক ও জুয়েলারিতে ডাকাতি ও লুটচক্রের মূলহোতা রাজা মিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রায় এক যুগ ধরে সংঘবদ্ধ এই চক্রটি ডাকাতি করে আসছিল। দুর্ধর্ষ বেশ কয়েকটি ডাকাতির পরও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ডাকাতির পর মালামাল ভাগাভাগি করে প্রত্যন্ত গ্রামে চলে যেতেন। সেখানে ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন থাকার পর আবারও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এক হতেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার (৪ এপ্রিল) র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর দুটি বিশেষ আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জ ও বরিশালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা হলেন চক্রের মূলহোতা মো. কাউসার হোসেন ওরফে বাচ্চু মাস্টার (৪২), তার সহযোগী মো. রাজা মিয়া (৫৪) ও মো. মাসুদ খান (৪২)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ১৯ দশমিক ৭০ গ্রাম স্বর্ণ ও নগদ তিন লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা স্বর্ণের দোকানে ডাকাতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন ৩০০ ভরি স্বর্ণ লুট করে ডাকাতরা। এ ঘটনায় জুয়েলার্সটির মালিক আবুল কালাম ভূঁইয়া ভাষানটেক থানায় মামলা করেন। পরে র্যাব ঘটনার তথ্য-উপাত্ত ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামি শনাক্তের কাজ এবং গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, তারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় র্যাবের হাতে একাধিকবার আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে। এ চক্রটির অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তারা প্রথমে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের দোকানসমূহে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগদান করে বা দোকান ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে স্বর্ণালঙ্কার লুট করার পর তারা আত্মগোপনে চলে যান ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা কিছুদিন পর নতুন লক্ষ্যবস্তু ঠিক করার জন্য আবারও যোগাযোগ করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, একইভাবে তারা ২০১৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ভল্ট ভেঙে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা লুট করে। এ ঘটনায় তারা ব্যাংকের পাশের একটি ঘরে এনজিও’র নামে মিথ্যা পরিচয়ে ভাড়া নেয়। ভল্ট লুটের এক সপ্তাহ আগে থেকে স্ক্রু ড্রাইভার ও শাবল দিয়ে দেয়াল কেটে ব্যাংকের ভল্টে ঢুকে ওই টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরে র্যাবের অভিযানে রাজা মিয়াসহ সাতজন গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনায় রাজা মিয়া তিন বছর কারাভোগ করে। একইভাবে তারা ২০১৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ৪৫৫ ভরি স্বর্ণ ও দুই লাখ টাকা লুট করে। র্যাবের অভিযানে তারা তিনজন গ্রেফতার হয় এবং কারাভোগ করে। গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, তারা ২০২০ সালে ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ২৩০ ভরি স্বর্ণ ও দেড় লাখ টাকা লুট করে। এ ঘটনার দুই মাস আগে এ চক্রের তিন সদস্য মিথ্যা পরিচয়ে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। এতদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে তারা গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা আরও জানান, তারা সংঘবদ্ধ ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। গ্রেফতাররা সবাই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে পারস্পারিক যোগসাজশে দেশের বিভিন্ন স্থানের স্বর্ণের দোকান লুট, ব্যাংক ডাকাতি ও মার্কেটে লুট করে আসছে। গ্রেফতার কাউসার রজনীগন্ধা মার্কেটে স্বর্ণের দোকান লুটের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দেড় মাস আগে ওই মার্কেটে ভুয়া পরিচয়ে একটি দোকান ভাড়া নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ভাড়া করা দোকানে নামসর্বস্ব মালামাল রেখে কৌশলে চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি মজুত করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার রাজা মিয়া ও তার সহযোগী কাউসার মাস্টারসহ অজ্ঞাত আরও তিন-পাঁচজন সদস্য রাত ১২টার দিকে মিরপুর-১৪, গোলচত্ত্বর একত্রিত হন। গ্রেফতার মাসুদ তাদেরকে রাত ১টার দিকে মার্কেটে যেতে বলেন। এসময়ের মধ্যে গ্রেফতার মাসুদ মার্কেটের অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীদের কৌশলে খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক সেবন করিয়ে তাদেরকে অচেতন করেন। অন্যরা মার্কেটের সামনে এলে মাসুদ ও তার এক সহযোগী গেটের তালা খুলে তাদেরকে কাউসারের ভাড়া করা দোকানের ভেতর নিয়ে যান। কাউসার মাস্টার ও তার এক সহযোগী মার্কেটের বাইরের চারপাশ নজরদারিতে থাকেন। রাত ২টার দিকে কাউসার মাস্টারের দোকানে আগে থেকে মজুত করে রাখা তালা ভাঙার যন্ত্রপাতি দিয়ে দুটি দোকানের তালা এবং শাটার ভেঙে রাজা মিয়াসহ আরও দুই-তিনজন দোকানের ভেতর প্রবেশ করেন। দোকানের ভেতর থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে তাদের ভাড়া করা দোকানে নিয়ে যান। এসময়ে মাসুদ দোকানের বাইরে পাহারা দেন। দোকান লুটের ঘটনা যেন বোঝা না যায়, সেজন্য তারা দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়ে যান। এরপর ভোরে লুট করা স্বর্ণ নিয়ে কেরানীগঞ্জে কাউসার মাস্টারের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, ঘটনার দিন সকালেই তারা লুট করা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা, নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে তাদের গ্রামের বাড়ি চলে যান। এ চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার রাজা মিয়া একজন দক্ষ তালা ভাঙার মেকার এবং অন্যরা বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী। গ্রেফতাররা খুব সাধারণ বেশভূষা ধারণ করে চলাফেরা করতে। ফলে কেউ তাদেরকে কোনো প্রকার সন্দেহ না করে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার রাজা মিয়া ১৯৯০ সাল থেকে বাসের কন্ডাক্টরের কাজ করতেন। ২০০২ সালে সংঘবদ্ধ চক্রটির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং সেই থেকেই তিনি অপরাধে জগতে ঢুকে পড়েন। পরে তিনি অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। অটোরিকশা চালানোর আড়ালে তারা লুট বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করতেন। গ্রেফতার রাজা মিয়া একজন দক্ষ তালা-চাবির মেকার। তিনি অর্ধশতাধিক চুরি ও ডাকাতিতে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তার নামে চুরি ও ডাকাতি সংক্রান্ত দুটি মামলা রয়েছে। তিনি কারাভোগও করেছেন।
গ্রেফতার কাউসার হোসেন মাধ্যমিক শেষ করে একটি প্রকল্পে চাকরি নেন। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকায় এক আইনজীবীর অফিস সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট চক্রের এক সদস্য আদালতে এলে সেখানে কাউসারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে ডাকাতিতে অংশ নিয়ে তিনি অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেফতার মাসুদ ঢাকার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ক্লিনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরি করা অবস্থায় ২০১০ সালের দিকে এ চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে থাকা অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জে সুপার মার্কেটের দুটি স্বর্ণের দোকানের প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ লুট করে। এরপর থেকে তিনি ডাকাতিচক্রের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন।
আমাদের বাংলা : : উখিয়া প্রতিনিধি : উখিয়ায় পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় মোহাম্মদ আলম (২৮) নামক এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত ...বিস্তারিত
এস এম নকিব নাছরুল্লাহ্, পিরোজপুর : : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা...বিস্তারিত
মোহাম্মদ ওবায়েদ চৌধুরী, উখিয়া : : কক্সবাজারের উখিয়ায় গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার সময় এক ইউপি সদস্যের মালিকানাধীন ড্রাম ট্রা...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, এই হিসাবে কিছুটা হেরফের হতে পারে। কারণ সব জায়গার তথ্য পাওয়া যায়...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোট পড়ার তথ্য দেওয়ার জন্য ম...বিস্তারিত
সংবাদদাতা, পঞ্চগড় : : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বিদ্যুতের মিটার লাগাতে গিয়ে কাঠমিস্ত্রি আবু সায়েদ ( ২৬ ) নামের এক যুবকের ...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 Dainik Amader Bangla | Developed By Muktodhara Technology Limited