বাংলাদেশ   রবিবার, ৫ মে ২০২৪  

শিরোনাম

মহান মুক্তিযুদ্ধে বি.এল.এফ-এর ভূমিকা : অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মণি’র অবদান অবিস্মরণীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরী    |    ০২:৩৯ পিএম, ২০২২-০৪-২৩

মহান মুক্তিযুদ্ধে বি.এল.এফ-এর ভূমিকা : অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মণি’র অবদান অবিস্মরণীয়

 

 

মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৩ই জুলাই আমার পিতা পাক হানাদার বাহিনী কৃর্তক শহীদ হন। তখন আমি আগরতলা চিতল পিলা ক্যাম্পে ছিলাম। সেখানে তৎকালীন ছাত্র নেতা ও পরবর্তী পর্যায়ে চট্টগ্রামের বি.এল.এফ-এর জেলা কমান্ডার এস.এম ইউসুফ মনি ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। মণি ভাই আমাকে সান্তনা দেন ও আমার পিতার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন। এরপর মণি ভাই আমাকে নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে যান। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে বিলনিয়া ট্রানাজটি ক্যাম্প, সাড়াসীমা ট্রানজিট ক্যাম্প, শ্রীনগর ক্যাম্প, হরিণা ক্যাম্প ও চোত্বাখোলা ট্রানজিট ক্যাম্প। এরপর থেকে আমি মণি ভাইয়ের সাথে ছিলাম ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে। ১৬ই ডিসেম্বরের পরে মণি ভাই ঢাকায় এসে সাংগঠনিক কাজের জন্য চট্টগ্রাম চলে আসেন। চট্টগ্রামে এসে ষ্টেশন বোডের হোটেল মিসকায় তার সহকমীদের নিয়ে উঠেন।এখানে বসে সাংগঠনিক কমিটি ও কাজ পরিচালনা করেন। । তখন মনি ভাই ঢাকায় না এসে সাংগঠনিক কাজের জন্য চট্টগামে অবস্থান করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তান থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করার পর তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে অবহিত করেন। বি.এল.এফ তথা মুজিব বাহিনী সংগঠিত করার ব্যাপারে শেখ মণি যে অবদান রেখেছেন তার উপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন। মুক্তিবাহিনীও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে আরো কয়েকটি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। এদের মধ্যে মুজিব বাহিনী গঠনের চূড়ান্ত সিদ্দান্ত নেয়া অনত্যম। ভারতীয় বাহিনীর মেজর জেনারেল এস.এম উবানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। এখানে বসে সাংঠনিক কমিটি ও কাজ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের স্থপতি মুজিবের নামে ১৯৭১ সালের মে মাসে এ বাহিনী গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভারতীয় বাহিনীর মেজর জেনারেল এস.এম উবানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। ভারতের দেরাদূনে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মুজিব বাহিনীর কাজ শুরু হয়। একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল মেঘালয়ের তুরা শহরের হাফলংয়ে। কিন্তু এক ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে এ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছিল দেরাদুন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে তানদুয়ার। এখানে মোট ১৪টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০ নভেম্বর মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। মুজিব বাহিনীকে ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। ১। উত্তরবঙ্গ সেক্টর: শিলিগুড়ির জলপাইগুড়ির পাঙ্গায় ছিল এ সেক্টরের সদরদপ্তর । এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সহ-অধিনায়ক ছিলেন মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মণি। ২। পশ্চিম অঞ্চল সেক্টরের সদরদপ্তর ছিল ভারতের ব্যারাকপুরে। এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমদ। সহ অধিনায়ক ছিলেন নুর আলম জিকু।কাজী আরেফ আহমদ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ৩। আরেকটি সেক্টরের সদরদপ্তর ছিল মেঘালয়ে গারো পাহাড়ের ভেতরে তুরা। এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। সহ অধিনায়ক ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ। ৪। চতুর্থ সেক্টরের সদরদপ্তর ছিল আগরতলা । এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি। সহ অধিনায়ক ছিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান । শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গে সহযোগিতা করতেন আসম আবদুর রব,আবদুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ।মুক্তিবাহিনীর শিবিরগুলো থেকে নেতৃস্থানীয় গেরিলারা আকস্মিকভাবে উধাও হয়ে যেতে থাকে । ১৯৭১ সালের জুনে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার প্রথম এ ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। মে মাসে মুজিব বাহিনী গঠন করা হলেও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীতাজউদ্দিন আহমদ জানতে পেরেছিলেন আগষ্ঠে। জেনারেল মানেক,শ তাকে জানান যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে এ বাহিনী গঠন করা হয়েছে । ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ পরবর্তী ছাত্র নেতা সিরাজুল আলম খাঁন,শেখ ফজলুল হক মণি, মরহুম কাজী আরেফ,আবদুল রাজ্জাক,তোফায়েল আহমেদ,আসম আবদুর রব,শাজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী ও আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন এ বাহিনীর সংগঠক। শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন অস্থায়ী কমান্ডার-ইন-চীফ। প্রাথমিকভাবে চারটি সেক্টরে সক্রিয় পাঁচ হাজার সদস্যকে মুজিব বাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরে এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬০ হাজার উন্নীত হয়। এ বাহিনীর ১৯ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ও ইচ্ছা ছাড়া আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কট্টর সমর্থকদের নিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়। তারা কখানো আনুষ্ঠানিক মুজিব সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেনি। তাই তাদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রবাসী সরকার ও সরকারের বাইরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জেনারেল ওসমানী প্রাথমিকভাবে ছাত্র ও যুব স্বেচ্ছাসেবকদের রিক্রুটে মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দকে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অচিরেই এসব নেতা একটি সুসংগঠিত,সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত বাহিনীর নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। মুজিব বাহিনীর আনুগত্য ছিল প্রথমে শেখ মুজিবের প্রতি এবং পরে তাদের কমান্ডারের প্রতি । প্রবাসী বাংলাদেশ সকারের প্রতি তাদের আনুগত্য ছিল না। চেইন অব কমান্ডের বাইরে সক্রিয় মুজিব বাহিনীর তৎপরতা মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ব্যবহার করেছিল। মুক্তিবাহিনীকে অবহিত না করে তারা প্রায়ই আক্রমণ করে বসতো। তাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিশোধমুলক হামলা চালাতো। এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্তিতিতে মুক্তিবাহিনীর পরিকল্পনা ব্যর্থ হতো। মুক্তিবাহিনীর কোনো কোনো কার্যকলাপ ভুল বুঝাবুঝি ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। তার সাক্ষাতের সূত্র ধরে মিসেস গান্ধী বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য ডি.পি. ধরকে নির্দেশ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ’র মতো উর্ধবতন সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। ডি.পি.ধর মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে লে.জেনারেল বি.এন সরকারকে অবহিত করেন।মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তারা বুঝতে পারেন যে,পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নয়। এ উপলদ্ধি থেকে তারা তাদের ধ্বংসাতœক কার্যকলাপ থেকে বিরত হয়। ডিসেম্বরে মুজিব বাহিনী মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার্স ফোর্সের পাশাপাশি রাঙ্গামাটি মুক্ত করার জন্য অগ্রসর হয় এবং মিজো গেরিলাদের নেটওয়ার্ক ধ্বংসে ভারতীয়দের সহায়তা করে। ভারত সরকার মুজিব বাহিনীকে ট্রাক ও জীপসহ একটি সি-৪,একটি এন-১২ এবং একটি পুরনো ডাকোটা বিমান প্রদান করে। অনেকেই বিশ্বাস করছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ র্দীঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষিতে যে কোন বিকল্প নেতৃত্বের উত্থান মোকাবিলা করা ছিল মুজিব বাহিনীর গঠনের উদ্দেশ্য। অন্যরা মনে করেন ,মুজিব নগর সরকারের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের ডানপন্থী উপদলের কর্মকান্ডে সন্দিহান হয়ে উঠায় মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দ এ বাহিনী গঠন করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে মুজিব
বাহিনী অন্যান্য মুুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতো। এ বাহিনী ঢাকার দক্ষিণ,দক্ষিণ-পশ্চিম ও অন্যান্য এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে দুঃসাহসী অভিযান চালায়। তাদেরকে গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছিল তুলনামূলভাবে উন্নতমানের । মুজিব বাহিনী গঠনের ব্যাপারে মুক্তিবাহিনী অন্ধকারে থাকায় সীমান্ত অতিক্রমকালে এ বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েকটি সংর্ঘষ হয়। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মুজিবী বাহিনীর কিছু তরুণ মেঘালয় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা করে । মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসব তরুণের কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল না। দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে নিজস্ব সংগঠনকে জোরদার করে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় করে তোলাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য । পরে ঐ বাহিনীর নেতৃবৃন্দকেও গ্রেফতার করা হয়। এসব যুব নেতা তাদের কৃতকর্মের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দানের প্রতিশ্রুতি দেন। বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্টায় বাংলাদেশ সরকার তাদের ক্ষমা করে দেয়। মুজিব বাহিনী গঠনের প্রেক্ষাপষ্ট সম্পর্কে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের পঞ্চদশ খন্ডের ১৩১ পৃষ্ঠায় ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম তার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি;তে লিখেছেন ,ভারতের দু’টি স্থানে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জেনারেল উবান এই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। আমি আজো বুঝে উঠতে পারছি না মুজিব বাহিনী নামে এই আলাদা বাহিনী গঠনের কোনো প্রয়োজন ছিল কি না? তবে যতদূর শুনেছি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে শেখ মণির লবি ছিল। তাকে বুঝানো হয় যে, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দানে ব্যর্থ হবে। অথবা এ নেতৃত্ব কোনো ধরনের আপোষ করতে পারে। তাকে আরো বুঝানো হয়, যে যুব শক্তি স্বাধীনতার উন্মেষ ঘটিয়েছে তারাই কেবলমাত্র সঠিক নেতৃত্ব দানে সক্ষম হবে। প্রয়োজনে এই নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এই নবশক্তি চীন ও নক্সালপন্থীদের বিরুদ্ধে স্বাধীন সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে। পরে আরো জেনেছি, ভারত সরকার এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয় যার অর্থ ছিল এক বাক্সে সব ডিম না রাখা। বিএসএফ’র রুস্তমজী মুজিব বাহিনী গঠনের তীব্র প্রতিবাদ করেন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত তার প্রতিবাদ গ্রাহ্য করা হয়নি। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ভারত সরকার মুজিব বাহিনী গঠন সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত মুজিবনগর সরকারের কাছে গোপন রাখে। তাজউদ্দিন ভাইসহ অনেককেই এ সিদ্ধান্ত পীড়া দিতো। জাতি যখন সর্ম্পূণভাবে একটি নেতৃত্বের পেছনে ঐক্যবদ্ধ ও আস্থাবান তখন যুব শক্তিকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা বা বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের জন্য যেমন সহায়ক হয়নি, তেমনি পরে দেশ পুর্নগঠনের কাজেও অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।
ওসমানী রাজনৈতিক সচেতন ছেলেদের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাব করেন। যুবনেতা আবদুর রাজ্জাক,তোফায়েল আহমেদ,আসম আবদুর রব প্রমুখ এ দায়িত্ব তাদের কাছে অর্পণ করার প্রস্তাব দিয়ে বললেন, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে তারা ভালো ছেলে রিক্রুট করে দিতে পারবে। ওসমানী তাদের প্রস্তাবে উৎসাহ বোধ করেন। তিনি থাকতেন আমিরুল ইসলামের পাশের রুমে। বালিগঞ্জে তার অফিস ছিল। তিনি তাকে একটি অথারাইজেশন লেটার লিখে দেয়ার অনুরোধ করেন। আমিরুল ইসলাম টাইপ করে অথারাইজেশন লেটার লিখে দেন। এই চিঠির সুযোগ গ্রহণ করে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান । তাজউদ্দিনকে মোকাবিলা করার মানসিকতা থেকে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মুজিব বাহিনী গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন ভবানীপুরের একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ দেন। শেখ ফজলুল হক মণি তাজউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে থাকেন এবং প্রবাসী সরকার গঠন সংক্রান্ত তার ভাষণ প্রচার বন্ধ করার জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় ৯ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় সহায়তার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীকে প্রভাবিত করার জন্য তার এক সময়ের বন্ধু ভারতীয় বিধান সভার সদস্য শ্রী সমরগুহের কাছে একটি পত্র লিখেন এবং এই পত্রটি তার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ভাগ্নে ফজলুল হক মণিকে দায়িত্ব দেন। শেখ মুজিবের নিজের হাতে লাল কালিতে লেখা এ পত্র অজ্ঞাত কারণে তার কাছে না পাঠিয়ে মণি নিজের
কাছে রেখে দেন। মণি এ পত্র ইন্দিরা গান্ধীর কাছে হস্তান্তর করেন। এ পত্রের জোরে মণি দাবি করতেন যে, তিনি শেখ মুজিবের উত্তরাধিকারী এবং তার অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার একচ্ছত্র ক্ষমতা শেখ মুজিব তাকে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বদরুদ্দিন ওমর তার ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্য কাহিনী’ পুস্তকের ১০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, যুব নেতাসহ অনেকেই সেদিন ভেবেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জীবিত নেই। ইয়াহিয়া খান এতদিনে তার মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাজউদ্দিন তাদের কোনো
দাবিই পূরণ করবেন না । অথচ বঙ্গবন্ধু বরাবরই তাদের সংগ্রামী ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কোনো সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে গ্রহণ করতেন না। এমনকি ৭ মার্চের ভাষণে তিনি তাদের কথা সংযোজন করেছেন। ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছের।বঙ্গন্ধু যে শুধু যুবনেতাদের গুরুত্ব অনুধাবন করতেন তাই নয়, তিনি অনেক ক্ষেত্রে তাদের উপর নির্ভর করতেন। তিনি কাছে থাকলে যুবনেতাদের উপর স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করার দায়িত্ব অর্পণ করতেন। কিন্তু তাজউদ্দিনের
দুঃসাহসের অন্ত নেই। তিনি যুবনেতাদের সঙ্গে ধমকের সুরে কথা বলেন। তাদের সংগ্রামী ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে নারাজ । স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনায় তিনি যুবনেতাদের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে তারা সব রকম সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হবেন। তাজউদ্দিনের ধৃষ্টতার শেষ নেই। তিনি বঙ্গবন্ধুর আতœীয় আবদুর রব সেরানিয়াবাতকেও উপেক্ষা করতেন। বঙ্গবন্ধু নিজে যে কোনো জটিল ব্যাপারে তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আতœীয়কে উপেক্ষা করা পরোক্ষভাবে তাকে উপেক্ষা করার শামিল। অতএব, যে কোনো মূল্যে তাজউদ্দিনকে অপসারণ করতে হবে। যুবনেতা মনে করতেন, বঙ্গবন্ধুর ভাবমুর্তিকে কাজে লাগিয়ে তার নিকটআতœীয় তরুণ শেখ মণিকে নেতৃত্বে বরণ করে নিলে বাংলাদেশ থেকে আগত তরুণদের প্রভাবিত করা সহজ হবে। তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা যদি তাদের মাধ্যমে হয় তাহলে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণের সহায়তা তাজউদ্দিনের সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব হবে। যুবনেতারা শেখ মণির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন। তাদের পরিকল্পনা কাজে পরিণত করার প্রথম পর্যায়ে কয়েকজন যুবনেতা দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে জানান যে, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন।বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগে তাদেরকে ভারত সরকারের সহায়তায় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়ে যান। তাজউদ্দিন আহমদের প্রতি বাংলাদেশ থেকে আগত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের কোনো সমর্থন নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই। তাদের কথার সমর্থনে তারা বঙ্গবন্ধুর এশটি পত্র রব সেরনিয়াবাতের মাধ্যমে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে হস্তান্তর করেন এবং বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালকে তার নিকট হাজির করেন। বাংলাদেশ থেকে আগত তাদের অনুগত তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য তারা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন। তিনি তাদের অনুরোধ রক্ষা করেন।ঐসব তরুণের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব অপর্ণ করা হয় মেজর জেনারেল উবানের উপর। এভাবে ভারত সরকারের অনুগ্রহ লাভ করে ঐ যুবনেতারা তাদের দূরভিসন্ধি চরিতার্থ করার উদ্দেশে সেদিন যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের যুবসমাজের মাথা নত করে দিয়েছে। আর এ ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে সেদিন সৃষ্টি হয়েছিল মুজিব বাহিনী। মুজিব বাহিনী গঠন সর্ম্পকে ১৯৭০ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি এমএ মোহাইমেন তার ‘ঢাকা-আগরতলা-মুজিবনগর ’ নপুস্তকের ৯৬-৯৭ পৃষ্টায় লিখেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী শেখ ফজলুল হক মণির মুজিব বাহিনীর জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা সংরক্ষণ করেছিল। তাদেরকে জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা বহুবার মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে এবং সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়। তারা নিজেদেরকে সমাজতন্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও কখনো বামপন্থীদের বরদাস্ত করতে পারেনি। তারা কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের তরুণ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দানের ঘোরতর বিরোধী ছিল। ভারতীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর ডানপন্থীরা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ছিলেন। বাম-ঘেঁষা প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের চরম সন্দেহের চোখে দেখা হতো।স্বাধীন বাংলাদেশে বামপন্থীদের শক্তি সঞ্চয়কে ভারত তাদের নিজেদের বিপদের কারণ বলে মনে করতো । শুরুতেই তাজউদ্দিন সাহেব এ বাহিনীকে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনয়নে উপর্যুপরি ভারতের সহায়তা কামনা করেন। কিন্তু তার অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি একই সময়ে কেন আলাদা একটি বাহিনী গঠন করা হলো তার জবাব আজো রহস্যাবৃত। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর সাপ্তাহিক হলিডেতে মাহমুদ হাসান ‘মুজিব বাহিনী বনাম মুক্তিবাহিনী: মুক্তিযুদ্ধকালে আওয়ামী লীগের অর্ন্তদ্বন্দ্ব’ শিরোনামে এক নিবদ্ধে লিখেছেন, ‘নিজেদেরকে রাজনৈতিক কারিশমার হিসেবে চাপিয়ে দেয়া ছাড়া সশস্ত্র সংগ্রামের পুরো সময়ে মুজিব বাহিনীর লড়াই করার কোনো রেকর্ড নেই । নিয়মিত বাহিনী হিসেবে গঠিত বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনী নামে (বিডিএফ) পরিচিত মুক্তিবাহিনী ও গেরিলা বাহিনীর কাছে অগ্রহণযোগ্য এ বাহিনী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও জেনারেল উবানের অনানুষ্ঠানিক অনুমোদনে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের এক নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম তার অ্যা টেল অব মিলিয়ন্স- এ লিখেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব ছাড়াই মুজিব বাহিনী নামে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠে। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদ ছিলেন এই বাহিনীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেছিল এবং এ পরিষদের উদ্যোগে ২৩ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে প্রাক্তন সৈনিক ও ছাত্রদের সম্মিলিত কুচকাওয়াজ ও মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের এ কার্যক্রমের পরিণতি ছিল মুজিব বাহিনী। বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট বা মুজিব বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব । সম্ভবত: এ কারণে তা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিতি ছিল। মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ ছিল গেরিলা যুদ্ধের । তবে বাহিনীকে যানবাহন ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ভারি অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করা ছাড়াও এ যুদ্ধের নেতৃত্ব যাতে কোন উগ্র ও চরমপন্থী দলের হাতে চলে না যায় মুজিব বাহিনী সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখে। কোনো চরম গ্রুপ বা দলের কারসাজিতে মুক্তিযোদ্ধারা যাতে বিভ্রান্ত এবং জাতীয়বাদী লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয় মুজিব বাহিনী সেদিকে লক্ষ্য রাখতো। মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারগণ মুজিব বাহিনী গঠনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ফলে, মুজিব বাহিনী যখন কোনো অপারেশনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতো তখন বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী মুজিব বাহিনীর সদস্যদের বন্দি করে নিয়ে আসতো। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের সংবাদও পাওয়া যেতো। মুজিব বাহিনীর কর্মকান্ড ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অসহ্য। মেজর জেনারেল খোন্দকার মোঃ নূরুন্নবীর (অব:) একটি উক্তি তার প্রমাণ । আট নম্বর সেক্টরে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে অংশগ্রহণকারী জেনারেল নুরুন্নবী তার ‘ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে সেক্টর আট’ নামে বইয়ের ১৬৫ পৃষ্টায় লিখেছেন, কুষ্টিয়া মুক্ত হওয়ার কিছুদিন পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এসে অভিযোগ করতে লাগলো যে, মুজিব বাহিনীর ছেলেরা বিভিন্ন জায়গায় বেশ উৎপাত করছে। মুজিব বাহিনী সর্ম্পকে আমিও শুনেছিলাম। কিন্তু তাদের চেইন অব কমান্ড এবং কার্যক্রম সর্ম্পকে আমার কিছুই জানা ছিল না। যুদ্ধের কোথাও তাদের দেখেছি বলে মনে হয়নি।এখন তাদের হাতে অস্ত্র। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে সেগুলো অনেক ভালো এবং তাদের চেহারার জৌলুসও আমাদের চেয়ে বেশি। ক্যাপ্টেন তৌফিকই-এলাহি চৌধুরীর সঙ্গে তাদের জেলা কর্ণধারের একদিন আলোচনা হলো। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগের লোক। তার কথাবার্তা আমার খুব পছন্দ হচ্ছিল না। তিনি খুব আগ্রাসীভাবে কথাবার্তা বলছিলেন । যাই হোক, ক্যাপ্টন তৌফিক তাদের বুঝালেন যাতে আমাদের ছেলেদের সঙ্গে তারা কোনো সংঘাতে না যায়। অবশ্য এরপর আর কোনো সংঘাত হয়নি।  আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বলছিল, স্যার , ওদের সংখ্যা খুবই কম এবং ওরা
খুবই ভীতু। আপনারা অনুমতি দিলে আমরা তাদের খরচ করে দেই । ক্যাপ্টেন তৌফিক উত্তর দিয়েছিলেন, এসব করার প্রয়োজন নেই। মেজর জেনারেল উবান তার ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং ’-এ মুজিব বাহিনী গঠনের বিস্তারিত বিবরন দিয়েছেন।চার যুব নেতা শেখ ফজুলল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয় চিত্তরঞ্জন সূতারের বাসায়।তাজউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে কেন্দ্র করে চার যুব নেতা ঐক্য হন। বিক্ষুদ্ধ চার নেতা ওয়ার কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন। তারা বলেন, যুদ্ধে বামপন্থী ও নক্সালপন্থীরা ঢুকে পড়েছে। তাই ওয়ার কাউন্সিলকে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার তাদের এ দাবি অগ্রাহ্য করে। চার যুবনেতার অন্যতম আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাজউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি ছিল ১৯৭১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের ঘোষিত নির্দেশের পরিপন্থী। এ তারিখে শেখ মুজিব তাজউদ্দিনের উপস্থিতিতে চার যুবনেতাকে বলেছিলেন, কমান্ড কাউন্সিল গঠন করতে হবে এবং কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হবে। তিনি আরো বলেন,স্বাধীনতার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত এ কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। আবদুর রাজ্জাক বলেন,বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন সে অনুযায়ী কাজ হলো না। প্রধানমন্ত্রী যদি কেউ হন তাহলে বঙ্গবন্ধুই হবেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে প্রধানমন্ত্রী করে তাজউদ্দিন উপ-প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।আর উপ- প্রধানমন্ত্রী তো সৈয়দ নজরুল ইসলাম হবেন। কেননা বঙ্গবন্ধু ছিলেন পার্লামেন্টের নেতা। আর সৈয়দ নজরুল ছিলেন উপ-নেতা। তাজউদ্দিন ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি। কিন্তু তিনি কমান্ড কাউন্সিল গঠন না করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন। এখান থেকেই তাজউদ্দিনের সঙ্গে চার যুবনেতার বিরোধের সূত্রপাত। তাজউদ্দিনের সঙ্গে কথা ছিল ভারতে গিয়ে চিত্তরঞ্জন সুতারের ২১ রাজেন্দ্র রোডের বাসায় দেখা হবে। কিন্তু তিনি সে ঠিকানায় না গিয়ে দিল্লি চলে যান। (চলবে)।

লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

রিটেলেড নিউজ

অভাবের কারণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বিষপানে এক নারীর আত্মহত্যা

অভাবের কারণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বিষপানে এক নারীর আত্মহত্যা

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : : রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম দজর এলাকায় বিষপান করে মধুমিতা চাকমা (৪০) উর্ধ্ব এক নারী আত্মহ...বিস্তারিত


রাখাইনে আরাকান আর্মির চলমান তৎপরতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

রাখাইনে আরাকান আর্মির চলমান তৎপরতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

আমাদের বাংলা ডেস্ক : : ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন (অবঃ) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘাত চলছে। ম...বিস্তারিত


রাজপথ থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক, দেশরতœ শেখ হাসিনা আবারও হলেন পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী

রাজপথ থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক, দেশরতœ শেখ হাসিনা আবারও হলেন পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী

আমাদের বাংলা ডেস্ক : : মো. কামাল উদ্দিন : ভাষা বিজ্ঞানি ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ভাষায়, ‘বঙ্গবন্ধু বিগত দু’হাজার বছরের ...বিস্তারিত


চরম মূল্য দিতে হবে

চরম মূল্য দিতে হবে

আমাদের বাংলা ডেস্ক : : আবুল খায়ের বাবু : ৭ ই অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের বিস্ময়কর আক্রমণের পর ইজরাইলের প্রতিশোধ আক্রমণে্র তি...বিস্তারিত


শবে বরাত : এই দিনটির ইতিহাস এবং গুরুত্ব জেনে নিন

শবে বরাত : এই দিনটির ইতিহাস এবং গুরুত্ব জেনে নিন

আমাদের বাংলা ডেস্ক : : মেরিনার আবু ফাতাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিনঃ কেন পালন করা হয় শবে বরাত? কবে থেকে পালন করা হয় পবিত্র এই ...বিস্তারিত


ক্যারিয়ার গঠনে ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প’

ক্যারিয়ার গঠনে ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প’

আমাদের বাংলা ডেস্ক : : মেরিনার আবু ফাতাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিনঃ আপনি কি ডিপ্লোমা বা গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী? ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

মেঘনা নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  মেঘনা নদীর নামে কুমিল্লা ও পদ্মা নদীর নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হ...বিস্তারিত


রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র,গু‌লি, চাপা‌তি, রামদা, ‌মোটর সাইকেলসহ ১ আসামী‌ গ্রেফতার

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : :                              রাজবাড়ীর পাংশায় ডি‌বির অ‌ভিযা‌নে ওয়ানশুটারগান,গু‌লি,...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর